Posts

Showing posts from February, 2023

দেয়াল

  এই বিষণ্ণ প্রাণহীন দুপুরবেলায় যখন সুনসান নৈঃশব্দ্য গ্রাস করে মহাকাল , উষ্ণ , নীরস , গম্ভীর রোদ শুষে সব প্রেম , হাসি , প্রাণ , একটা মাতাল আড়ষ্টতা আষ্টেপৃষ্ঠে রাখে বেঁধে এই প্রেমহীন কংক্রিটের খাঁচায় , তখন আমি থাকি সেই ভীষণ একলা হলুদ পাখিটার অপেক্ষায় , সে আসুক , আমার জানালায় ঠুকরে দিক , একটু প্রাণের স্পন্দন নৈঃশব্দ্য ভাঙুক। সে বলুক , ‘ তোমার তো ভালোবাসা আছে , সে ভালোবাসা একটা প্রমত্ত নদী , নদীর মাঝে শুধু একটা বাঁধের দেয়াল , দেয়ালের দুপাশে কষ্ট ভাসে , প্রেম ভাসে , অনেকের তো প্রেমই নেই , তোমার তো তাও আছে , না হয় ওই দেয়ালের ওপাশে’   আমি চাই ঢং ঢং শব্দে জোড়ে একটা ঘণ্টা বাজুক , সেই ঘুম ভাঙা শব্দে ভেঙে যাক এই নিস্তব্ধতা , ভালোবাসার এই প্রমত্ত নদীর মাঝে যে দেয়াল তা প্রবল ঢেউয়ের   আঘাতে চুরমার হোক , ভালোবাসার স্রোত , ঢেউ , সব হোক মিশে একাকার। প্রবল একটা ঝর আসুক , সেই ঝরের উন্মত্ততায় , আমরা করি উল্লাস- এ দেয়াল ভাঙার।
Image
  পাশের বাসার তুলি প্রচণ্ড ভালোবাসে সাকিবকে। আজ থেকে দুই বছর আগে, নিউ মার্কেট এ হঠাৎ সাকিব এর হাত ধরে তুলি বলেছিলো: ‘আমি আপনার সাথে সারা জীবন থাকতে চাই’। তুলির এ অপ্রত্যাশিত আচরণের উত্তরে সাকিব কিছুই বলেনি, শুধু হেসেছে। তুলি খুব স্পষ্টভাবেই বুঝেছিলো যে সেটা ছিল একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ভালবাসা প্রত্যাখ্যাত হবার জন্য তুলির যে সকল অপরাধ ছিল তা হলো: তুলি সাকিব এর চেয়ে মাত্র দুই বছর এর ছোট, কিন্তু সাকিব এর কাছে বিয়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড এইজ গ্যাপ হলো প্রায় আট থেকে দশ বছর। দেখতে খারাপ না, কিন্তু আবার সাকিবের যেমন দুধে আলতা গায়ের রঙ এর মিষ্টি মেয়ে পছন্দ, তেমনটি না। সাকিব ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা একজন সুদর্শন যুবক, তাই বিয়ের ব্যপারে তার আশা এমন যে কোন ধনী বাবার সুন্দরী মেয়েকে তার হাতে তুলে দেয়া হবে। ঘরে শুধু সুন্দরী বৌ থাকলেই তো আর হয়না, ফাইনানশিয়াল সিকিউরিটিও দরকার আছে। তুলিরা যে বাসায় ভাড়া থাকে তা সাকিবের বাসার ঠিক পাশেই, দুই বাসার বারান্দা প্রায় একসাথে লাগানো।   তুলিদের বাসা সাকিবের বাসার চাইতে অনেক ছোট আর অনেক কম ভাড়ার সাধারণ একটা বাসা। তাই তুলির ভালবাসা ,ঘন ঘন ফোন আর দেখা করতে চাওয়াকে...

ছুটি

Image
শ্রাবণ মাসের ঝুম বৃষ্টি, জহির গার্ড রুমের ভিতর বসে আছে। হঠাৎই তার স্ত্রী পারুলের ফোন আসলো, জানালো আরিফের প্রচণ্ড জ্বর, সে নাকি খুব করে চাচ্ছে বাবা তার পাশে এখন একটু থাকুক, বাবা আসলেই নাকি সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। আরিফ ক্লাস ফাইভে পড়ে, জন্মের পর সব কিছু ঠিক ঠাক বুঝার পর থেকেই জহির বাসা থেকে অনেক দূরে দূরে চাকরি করে, বাবাকে তেমন কাছেই পাওয়া হয়নি তার। বাবা ছেলের একসাথে থাকতে না পারার যন্ত্রণাটা আরিফের যত বেশি জহিরের তার চাইতে আরও অনেক অনেক বেশি, কারণ আরিফের কষ্টের দিক শুধু একটা: বাবাকে কাছে না পাওয়া, কিন্তু জহিরের কষ্টটা বহুমুখী, যেমন: ভালোবাসার মানুষের সাথে না থাকতে পারার কষ্ট, বাবার দায়িত্ব ঠিকঠাক ভাবে পালন করতে না পারার কষ্ট, আরিফ যে কষ্ট পাচ্ছে বাবাকে পাশে না পেয়ে সেটা ভাবার কষ্ট আর হয়তোবা আরও ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার কিছু কষ্ট। আরিফ আর তার মা নানামুখী কষ্টের কথা ফোন করে জহিরকে বলতে পারে কিন্তু জহির তার জীবনের কষ্টগুলোর কোনটাই পারুল বা আরিফকে বলেনা। জহির ভাবে যে “ওদের তো এমনিতেই সুখ দিতে পারলাম না, আবার নিজের দুঃখ আর টেনশনের কথা বলে তাদের দুঃখ বাড়াতে যাবো কেনো?   বৃষ্টি আরও বেড়ে...